27 September 2017

পুঠিয়ার নামকরন


পুঠিয়ার নামকরণ সর্ম্পকে একাধিক জনশ্রুতি প্রচলিত আছে। কেউ কেউ বলে থাকেন যে শশধর পাঠকের একমাত্র পুত্র বৎসাচার্য্য (বৎসারাচার্য্য) । এই বৎসাচার্য্যই পুঠিয়ার রাজ বংশের প্রতিষ্ঠাতা । তিনি তন্ত্র ও জ্যোতিষ শাস্ত্রে প্রসিদ্ধ পন্ডিত ছিলেন। তিনি গৃহী হইয়া, বিষয় বাসনা শূন্য ছিলেন এবং ঋষির ন্যায় কাল যাপন করিতেন। এই বৎসাচার্য্যের একজন সেবিকা ছিল যার নাম পুঠি বাঈ। (অনেকেই বলে থাকেন যে পুটি বাঈ নামে বৎসাচার্য্যের এক বোন ছিল) বৎসাচার্য্য পুঠি বাঈ কে খুব ভালোবাসতেন। পুঠি বাঈ একদিন হঠাৎ করে কলেরা রোগে আক্রান্ত হয়। হেকিম-কবিরাজের চিকিৎসা চললেও পুঠি বাঈ এর শারিরিক অবস্থার কোন উন্নতি না হয়ে ক্রমশঃ অবনতির দিকে যাচ্ছিল ।

বৎসাচার্য্য বুঝতে পারলেন যে, তাঁর সেবিকা পুঠি বাঈ আর বাঁচবেনা । তাই বৎসাচার্য্য পুঠি বাঈ এর শিয়রে বসে তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, তার (পুঠি বাঈ) অন্তিম খায়েস বা ইচ্ছা সর্ম্পকে। পুঠি বাঈ তার অন্তিম খায়েস ব্যক্ত করতে গিয়ে বৎসাচার্য্যকে বললেন যে, এই এলাকার নাম যেনো তার সেবিকা পুঠিবাঈ এর নাম অনুসারে পুঠিয়া রাখা হয়। বৎসাচার্য্য পুঠি বাঈ এর মৃত্যুর পর এই এলাকার নাম পুঠিয়া রাখেন। এ প্রসংঙ্গে একটি সংগত বিষয় আসে তা হল বৎসাচার্য্য গৃহী হইয়া, বিষয় বাসনা শূন্য ছিলেন এবং ঋষির ন্যায় কাল যাপন করতেন । যাগ,যজ্ঞ এবং তপস্যায় তাঁহার অধিকাংশ সময় ব্যয় হত। অধিকাংশ সময় তিনি নির্জনে বসবাস করতেন। তিনি বিবাহিত এবং সাত পুত্রের বাবা ছিলেন। যিনি বিষয় বাসনা শূন্য এবং ঋষির ন্যায় কাল যাপন করতেন তিনি কেন সেবিকা রাখবেন?

অন্য এক জনশ্রুতিতে আছে যে বর্তমান পুঁঠিয়া রাজ বাড়ী সংলগ্ন এবং পাঁচ আনি খেলার মাঠের পশ্চিমে স্যাম সাগর। এই স্যাম সাগর পুঠিয়া রাজ বাড়ী প্রতিষ্ঠার পূর্বে একটি বিল ছিল। বিলটির নাম ছিল পুঠি মারীর বিল। বিশাল জলাশয়। রাজা পীতম্বর এর সময় পুঁঠিয়া রাজ বাড়ীর সৌর্ন্দয্য বৃদ্ধির জন্য এই জলাশয় কে পুকুরে রুপান্তর করা হয়। যে পুকুর এখন স্যাম সাগর নামে পরিচিত। অনেকের ধারণা এই স্যাম সাগরের পূর্বের নাম পুঠি মারীর বিল থেকেই বর্তমান পুঠিয়া নামের নামকরন । একটি বিষয় পরিস্কার যে পুঁঠিয়া নামকরনের কোন ইতিহাস রাজশাহীর প্রাচীন পাবলিক লাইব্রেরী গুলিতে ও পাওয়া যায় নি। রাজশাহী নামকরন রাজশাহী প্রাচীন ইতিহাসে থাকলেও পুঠিয়া নামকরনের ইতিহাস পুঠিয়ার রাজ বংশের ইতিহাসে নাই। এখন সম্মানিত পাঠক মণ্ডলীই বেছে নিবেন উপরে বর্নিত কোন জনশ্রুতিটি পুঠিয়া নামকরনের জন্য গ্রহণ যোগ্য জনশ্রুতি। পুঠিয়া নাম পূর্ব থেকে জারী না থাকলে পুঠিয়া রাজ বংশের নাম পুঠিয়া রাজ বংশ না হয়ে অন্য নাম হতে পারতো। পুঠিয়া নাম পূর্ব থেকে জারী না থাকলে চর্তুদ্দশ খৃষ্টাব্দের শেষ অথবা পঞ্চদশ খৃষ্টাব্দের প্রথমেই পুঠিয়া নামে রাজধানী গঠন হত না।